শিরিন সংগ্রামরত জীবন যোদ্ধা এক নারী। ভারতের মুম্বাই শহরে থ্রি হুইলার ট্যাক্সি চালিয়ে ৩ সন্তানসহ একটি পরিবারের সকল খরচ বহন করেন তিনি। ইতোমধ্যেই এই সাহসী নারীর গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশ জুড়ে। হিউম্যানস অব বোম্বাই নামে এক ফেসবুক পেজে উঠে আসে শিরিনের জীবন লড়াই। সেই শিরিনকে নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রধান সারির গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
শিরিনের জন্ম রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে। বাবা-মার দাম্পত্যজীবন কখনোই সুখের ছিল না। ঝগড়া তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এ কারণে শিরিন যখন খুব ছোট তখনেই তারা বাবা-মার বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তার মা অন্য একজনকে বিয়ে করেন। কিন্তু সমাজ এই দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে না পেরে তার মাকে চরিত্রহীনা অপবাদ দেয়। সেই অপবাদ সহ্য করতে না পেরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন শিরিনের মা। এদিকে বোনের যৌতুক দিতে না পারার কারণে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন করে বিষপান করে হত্যা করা হয়। একমাত্র বাবাও আরেক বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেলেন।
শিরিনের বৈবাহিক জীবনে ৩টি সন্তান থাকলেও মায়ের মতো টেকেনি সংসার অভাগি এই নারীর। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সন্তানদের নিয়ে নেমে পড়লেন এই জীবনযুদ্ধে। এ বিষয়ে শিরিন বলেন, ‘তিনটা ছোট মুখ নিয়ে আমি রাস্তায় নেমে আসলাম। এমন দুঃসময়ে আমার কাছে কোনো অর্থও ছিল না। তখন ফুটপাতে বিরিয়ানি বেচতে শুরু করলাম। কিন্তু পুলিশ সেটি তুলে দিল। আমার স্বামী ছিল একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। তার মতো তখন আমিও ট্যাক্সি চালাতে শুরু করলাম।’
ট্যাক্সি চালিয়েই স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পাওয়া শিরিন এখন স্বপ্ন দেখেন সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করবেন। এমকি বাচ্চাদের কিনে দিতে চান মোটরকার। প্রথম দিকে অনেকেই তার সমালোচনা করতো। মেয়ে হয়ে ট্যাক্সি চালায় বলে কটু কথা বলত, অশ্লীল মন্তব্য করতেও ছাড়তো না। তবে অনেকেই আবার তার এই সাহসিকতার প্রশংসাও করতো। অনেক প্যাসেঞ্জার তাকে জরিয়ে ধরে বাহবাও দিয়েছে।
এক প্যাসেঞ্জারের স্মৃতিচারণ করে শিরিন বলেন, ‘একবার গাড়িতে এক ভদ্রলোক উঠেছিলেন। আমি যে নারী তিনি সেটা খেয়াল করেননি। ফলে ‘ভাই’বলে সম্বোধন করেছিলেন। পরে যখন তিনি বুঝতে পারেন, তখন মজা করে আমাকে ‘লেডি দাবাং’ বলে মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।’